• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একের পর এক ভুয়া এনআইডিতে দলিল রেজিস্টি্র

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে একের পর এক ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি অব্যাহত থাকলেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভুগি মহল। ফলে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। এই সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু দলিল লেখক ও কর্মচারী-কর্মকর্তারদের যোগসাজশে জাল এনআইডি ব্যবহার করে একের পর এক অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে দলিল সম্পাদন করছে চক্রটি। ইতঃপূর্বে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সে সময় ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনিক তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি খোলস পালটে নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় প্রায় এক ডজন মামলা হলেও সেসব মামলার দৃশ্যত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় বর্তমানে ওই সব মামলা গুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে এখনো ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলছেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি দেখান তা আদৌ সঠিক কি না বা জাল অথবা ভুয়া কি না তা যাচাই-বাছায় করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের। ফলে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’ তার এ মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, জেলা রেজিস্টি্র অফিসের ওই কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচায়-বাছায় করা সম্ভব।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নং ৬৪০২৬৬৯৪০৯ এবং আমমোক্তারনামা দলিল নং ১১২১২/২০১৭ ব্যবহার করে প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্টি্র করা হয়। যার নং ১৭৯৪/২০২৩। ওই অফিসের রেকর্ড কিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে সৃষ্ট ওই আমমোক্তারনামা দলিল সৃষ্টির সমর্থনে কোনো প্রকার যাচায়করণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে বিচারাধীন মামলা থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তাছাড়া ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বা ভুয়া বলে ইতোপূর্বে দলিল দাতারা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতারাবস্থায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা মৃত এমএম আব্দুল হাকিমের ছেলে এমএম আব্দুল ওয়াদুদ গংয়ের পৈতৃক ভূ—সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্টি্র করে নিয়েছে ওই চক্রটি। দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছ থেকে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এ ধরনের ঘটনা আমাদের এখানে খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। কিন্তু এরমধ্যে এতো জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি। সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানায়, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মোঃ মারজুম খাঁন নিজেই ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লিখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলেন, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদ বাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার’। সেজন্য তোমাকে ১০ হাজার টাকা দেব বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়’। এ বিষয়ে কথা বলতে দলিল দাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

দলিল গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের সেল ফোনে কল দিলে তা বিজি পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার স্বামী মারজুম খাঁন কলব্যাক করে প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলেন, আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দেখেন, উনি সেখ সেলিমের বোন, আপনার এতো স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন? সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন জানান, উল্লিখিত দলিলটি জাল বলে আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে ওই দলিলে তফশিলভুক্ত জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্টি্র অফিসে সম্পাদিত ১৭৯৪/২০২৩ দলিলের দাতা দেলোয়ার হোসেন তার নামের পাশে ব্যবহৃত এনআইডি নং ৬৪০২৬৬৯৪০৯ এর কোনো বৈধ ডাটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads